সূচক ও লগারিদম

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - গণিত - | NCTB BOOK

অনেক বড় বা অনেক ছোট সংখ্যা বা রাশিকে সূচকের সাহায্যে লিখে অতি সহজে প্রকাশ করা যায় । ফলে হিসাব গণনা ও গাণিতিক সমস্যা সমাধান সহজতর হয়। তাছাড়া সূচকের মাধ্যমেই সংখ্যার বৈজ্ঞানিক বা আদর্শ রূপ প্রকাশ করা হয়। তাই প্রত্যেক শিক্ষার্থীর সূচকের ধারণা ও এর প্রয়োগ সম্পর্কে জ্ঞান থাকা আবশ্যক।

সূচক থেকেই লগারিদমের সৃষ্টি। লগারিদমের সাহায্যে সংখ্যার বা রাশির গুণ, ভাগ ও সূচক সম্পর্কিত গণনার কাজ সহজ হয়েছে। ক্যালকুলেটর ও কম্পিউটার এর ব্যবহার প্রচলনের পূর্ব পর্যন্ত বৈজ্ঞানিক হিসাব ও গণনায় লগারিদমের ব্যবহার ছিল একমাত্র উপায় । এখনও এগুলোর বিকল্প হিসাবে লগারিদমের ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ।

এ অধ্যায়ে সূচক ও লগারিদম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

 

এ অধ্যায় শেষে শিক্ষার্থীরা ---

  • মূলদ সূচক ব্যাখ্যা করতে পারবে।
  • ধনাত্মক পূর্ণ-সাংখ্যিক সূচক, শূন্য ও ঋণাত্মক পূর্ণ-সাংখ্যিক সূচক ব্যাখ্যা ও প্রয়োগ করতে পারবে।
  • সূচকের নিয়মাবলি বর্ণনা ও তা প্রয়োগ করে সমস্যার সমাধান করতে পারবে।
  • n তম মূল ও মূলদ ভগ্নাংশ সূচক ব্যাখ্যা করতে পারবে এবং n তম মূলকে সূচক আকারে প্রকাশ করতে পারবে।
  • লগারিদম ব্যাখ্যা করতে পারবে।
  • লগারিদমের সূত্রাবলি প্রমাণ ও প্রয়োগ করতে পারবে।
  • সাধারণ লগারিদম ও স্বাভাবিক লগারিদম ব্যাখ্যা করতে পারবে।
  • সংখ্যার বৈজ্ঞানিক রূপ ব্যাখ্যা করতে পারবে।
  • সাধারণ লগারিদমের পূর্ণক ও অংশক ব্যাখ্যা করতে পারবে।
  • ক্যালকুলেটরের সাহায্যে সাধারণ ও স্বাভাবিক লগারিদম নির্ণয় করতে পারবে।

 

সূচক (Exponents or Indices)

আমরা ষষ্ঠ শ্রেণিতে সূচকের ধারণা পেয়েছি এবং সপ্তম শ্রেণিতে গুণের ও ভাগের সূচক নিয়ম সম্পর্কে জেনেছি। সূচক ও ভিত্তি সংবলিত রাশিকে সূচকীয় রাশি বলা হয়।

 

a যেকোনো বাস্তব সংখা এবং n যেকোনো ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যা হলে, n সংখ্যক a এর ক্রমিক গুণ হলো an । অর্থাৎ, a × a × a × ... × a (n সংখ্যক বার a) = an । এখানে, n হলো সূচক বা ঘাত এবং a হলো ভিত্তি। আবার, বিপরীতক্রমে an = a × a × a × a (n সংখ্যক বার a)।

সূচক শুধু ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যাই নয়, ঋণাত্মক পূর্ণসংখ্যা বা ধনাত্মক ভগ্নাংশ বা ঋণাত্মক ভগ্নাংশও হতে পারে। অর্থাৎ, ভিত্তি a ∈ R (বাস্তব সংখ্যার সেট) এবং সূচক n ∈ Q (মুলদ সংখ্যার সেট) এর জন্য an সংজ্ঞায়িত। বিশেষ ক্ষেত্রে, n ∈ N (স্বাভাবিক সংখ্যার সেট) ধরা হয়। তাছাড়া অমূলদ সূচকও হতে পারে। তবে সেটা মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যসূচি বহির্ভূত বলে এখানে আর আলোচনা করা হয় নি।

 

সূচকের সূত্রাবলি (Index Laws)

ধরি, a ∈ R (বাস্তব সংখ্যার সেট) এবং m, n ∈ N (স্বাভাবিক সংখ্যার সেট)।

সূত্র ১ (গুণ). am×an=am+n

সূত্র ২ (ভাগ). 

নিচের ছকের খালি ঘরগুলো পূরণ কর :

সূত্র ৩ (গুণফলের ঘাত). (ab)n = an×bn

সূত্র ৪ (ভাগফলের ঘাত). abn=anbn, b0

সূত্র ৫ (ঘাতের ঘাত). (am)n=amn

 

শূন্য ও ঋণাত্মক সূচক (Zero and Negative Indices)

সূচকে সূত্রাবলির প্রয়োগ ক্ষেত্র সকল পূর্ণসংখ্যা সম্প্রসারণের লক্ষে a0 এবং a-n (যেখানে n স্বাভাবিক সংখ্যা) এর সংজ্ঞা দেয়া প্রয়োজন।

সংজ্ঞা ১ (শূন্য সূচক). a0=1, (a0)

সংজ্ঞা ২ (ঋণাত্মক সূচক). a-n=1an, a0, nN

এই সংজ্ঞা দুইটির ফলে সূচক বিধি m এবং n এর সকল পূর্ণসাংখ্যিক মানের জন্য বলবৎ থাকে এবং এরূপ সকল সূচকের জন্য aman=amn খাটে।

লক্ষ কর, anan=an-n=a0.

 

উদাহরণ ১. মান নির্ণয় কর : ক) 5353  খ) 235×23-5

সমাধান : 

 

উদাহরণ ২. সরল কর : ক) 54×8×1625×125 খ) 3.2n-4.2n-22n-2n-1

সমাধান :

 

উদাহরণ ৩. দেখাও যে, (ap)q-r.(aq)r-p.(ar)p-q=1

সমাধান : 

কাজ : খালি ঘর পূরণ কর :

 

 

n তম মূল (n th Root)

 

কাজ : সরল কর : 

লক্ষণীয় : 

 

 

লগারিদম (Logarithms)

সূচকীয় রাশির মান বের করতে লগারিদম (Logarithms) ব্যবহার করা হয়। সাধারণ লগারিদমকে সংক্ষেপে লগ (Log) লেখা হয়। বড় বড় সংখ্যা বা রাশির গুণফল, ভাগফল ইত্যাদি লগারিদমের সাহায্যে সহজে নির্ণয় করা যায়।

আমরা জানি, 23= এই গাণিতিক উক্তিটিকে লগের মাধ্যমে লেখা হয় log28=3 হলে 23= একইভাবে 2-3=123=18 কে লগের মাধ্যমে লেখা যায়, log218=-3 ।

ax=N, (a>0, a1) হলে, x=logaN  কে N এর a ভিত্তিক লগ বলা হয়। 

দ্রষ্টব্য : ধনাত্মক বা ঋণাত্মক যাই হোক না কেন, a > 0 হলে az সর্বদা ধনাত্মক। তাই শুধু ধনাত্মক সংখ্যারই লগের মান আছে যা বাস্তব। শূন্য বা ঋণাত্মক সংখ্যার লগের বাস্তব মান নেই।

কাজ : নিচের সারণিগুলোতে সূচক হতে লগের মাধ্যমে প্রকাশ কর :

 

লগারিদমের সূত্রাবলি (Laws of Logarithms)

ধরি, a > 0, a ≠ 1; b > 0, b ≠ 1 এবং M > 0, N > 0

 

 সূত্র ৬ (শূন্য ও এক লগ).   a > 0, a = 1 হলে  ক) loga1=0  খ) logaa=1

 

 

 

উদাহরণ ৭. ক) 55 এর 5 ভিত্তিক লগ কত? খ) 400 এর লগ 4 হলে লগের ভিত্তি কত?

সমাধান : 

 

 

 

 

সংখ্যার বৈজ্ঞানিক বা আদর্শ রূপ (Scientific or Standard Form of Numbers)

সূচকের সাহায্যে আমরা অনেক বড় বা অনেক ছোট সংখ্যাকে সহজ আকারে প্রকাশ করতে পারি। 

যেমন, আলোর গতি = 300000 কি.মি./সে. 300000000 মিটার/সে

    = 3 × 100000000মি./সে. = 3 × 10º মি./সে.

আবার, একটি হাইড্রোজেন পরমাণুর ব্যাসার্ধ

    = 0.0000000037 সে. মি.

    =3710000000000 সে.মি. =37×10-10 সে.মি.

    = 3.7×10×10-10 সে.মি. =3.7×10-9 সে.মি.

সুবিধার্থে অনেক বড় বা অনেক ছোট সংখ্যাকে ax 10” আকারে প্রকাশ করা হয়, যেখানে, 1 < a < 10 এবং n ∈ Z । কোনো সংখ্যার a × 10n রূপকে বলা হয় সংখ্যাটির বৈজ্ঞানিক বা আদর্শ রূপ।

কাজ : নিচের সংখ্যাগুলোকে বৈজ্ঞানিক আকারে প্রকাশ কর :

   ক) 15000

   ক) 0.000512

   খ) 123.000512

 

লগারিদম পদ্ধতি (Logarithmic Method)

লগারিদম পদ্ধতি দুই ধরনের :

ক) স্বাভাবিক লগারিদম (Natural Logarithm): স্কটল্যান্ডের গণিতবিদ জন নেপিয়ার (John Napier: 1550-1617) ১৬১৪ সালে e কে ভিত্তি ধরে প্রথম লগারিদম সম্পর্কিত বই প্রকাশ করেন। e একটি অমূলদ সংখ্যা, e = 2.71828...। তাঁর এই লগারিদমকে নেপিরিয়ান লগারিদম বা e ভিত্তিক লগারিদম বা তত্ত্বীয় লগারিদমও বলা হয়। logex কে Inx আকারেও লেখা হয়।

খ) সাধারণ লগারিদম ( Common Logarithm): ইংল্যান্ডের গণিতবিদ হেনরি ব্রিগস (Henry Briggs: 1561-1630) ১৬২৪ সালে 10 কে ভিত্তি ধরে লগারিদমের টেবিল (লগ টেবিল বা লগ সারণি) তৈরি করেন। তাঁর এই লগারিদমকে ব্রিগস লগারিদম বা 10 ভিত্তিক লগারিদম বা ব্যবহারিক লগারিদমও বলা হয়। এই লগারিদমকে log1ox আকারে লেখা হয়।

দ্রষ্টব্য : লগারিদমের ভিত্তির উল্লেখ না থাকলে রাশির (বীজগণিতীয়) ক্ষেত্রে e কে এবং সংখ্যার ক্ষেত্রে 10 কে ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়। লগ সারণিতে ভিত্তি 10 ধরতে হয়।

 

সাধারণ লগের পূর্ণক (Characteristics of Common Log) 

একটি সংখ্যা N কে বৈজ্ঞানিক আকারে প্রকাশ করে পাই,

N=a×10n, যেখানে N>0,1a<10 এবং n ∈ Z

উভয়পক্ষে 10 ভিত্তিতে লগ নিয়ে পাই,

ভিত্তি 10 উহ্য রেখে পাই, logN = n + loga

n কে বলা হয় logN এর পূর্ণক।

দ্রষ্টব্য : নিচের ছক থেকে লক্ষ করি: প্রদত্ত সংখ্যার পূর্ণ অংশে যতগুলো অঙ্ক থাকবে, সংখ্যাটির লগারিদমের পূর্ণক হবে সেই অঙ্কসংখ্যার চেয়ে 1 কম এবং তা হবে ধনাত্মক। অর্থাৎ উল্লিখিত অঙ্ক সংখ্যা m হলে সংখ্যাটির লগারিদমের পূর্ণক হবে m - 1

দ্রষ্টব্য: এবার নিচের ছক থেকে লক্ষ করি: প্রদত্ত সংখ্যার পূর্ণ অংশ না থাকলে দশমিক বিন্দু ও এর পরের প্রথম সার্থক অঙ্কের মাঝে যতগুলো ০ (শূন্য) থাকবে, সংখ্যাটির লগারিদমের পূর্ণক হবে শূন্যের সংখ্যার চেয়ে 1 বেশি এবং তা হবে ঋণাত্মক। অর্থাৎ উল্লিখিত শূন্যের সংখ্যা k হলে সংখ্যাটির লগারিদমের পূর্ণক হবে {–(k + 1)}।

পূর্ণক ঋনাত্মক হলে, পূর্ণকটির বামে ‘–' চিহ্ন না দিয়ে পূর্ণকটির উপরে '—' (বার চিহ্ন) দিয়ে লেখা হয়। যেমন, পূর্ণক –3 কে লেখা হবে 3- দিয়ে। তা না হলে অংশকসহ লগের সম্পূর্ণ অংশটি ঋণাত্মক বুঝাবে।

দ্রষ্টব্য : পূর্ণক ধনাত্মক বা ঋণাত্মক হতে পারে, কিন্তু অংশক সর্বদা ধনাত্মক।

 

উদাহরণ ১১. নিচের সংখ্যাগুলোর লগের পূর্ণক নির্ণয় কর :

ক) 5570   খ) 45.70   গ) 0.4305   ঘ) 0.000435

সমাধান :

 

 

সাধারণ লগের অংশক (Mantissa of Common Log)

কোনো সংখ্যার সাধারণ লগের অংশক 1 অপেক্ষা ছোট একটি অঋণাত্মক সংখ্যা। এটি মূলত: অমূলদ সংখ্যা। তবে একটি নির্দিষ্ট দশমিক স্থান পর্যন্ত অংশকের মান বের করা হয়। কোনো সংখ্যার লগের অংশক লগ তালিকা থেকে বের করা যায়। আবার তা ক্যালকুলেটরের সাহায্যেও বের করা যায়। আমরা দ্বিতীয় পদ্ধতিতে, অর্থাৎ ক্যালকুলেটরের সাহায্যে সংখ্যার লগের অংশক বের করবো।

 

উদাহরণ ১২. log2717 এর পূর্ণক ও অংশক নির্ণয় কর :

সমাধান : 

 

উদাহরণ ১৩. log43.517 এর পূর্ণক ও অংশক বের কর।

সমাধান : 

 

উদাহরণ ১৪. 0.00836 এর লগের পূর্ণক ও অংশক কত?

সমাধান : 

 

 log0.00836 এর পূর্ণক –3 এবং অংশক .92221, অংশকটি সর্বদা অঋণাত্মক হওয়ায় এখানে পূর্ণকের ‘-’ চিহ্নটি সংখ্যাটির ওপরে দেখানো হয়।

 

উদাহরণ ১৫. loge10 নির্ণয় কর :

সমাধান : 

কাজ : ক্যালকুলেটর ব্যবহার করে নিম্নলিখিত সংখ্যাগুলোর 10 ও e ভিত্তিক লগ নির্ণয় কর :

   ক) 2550

   খ) 52.143

   গ) 0.4145

   ঘ) 0.0742

Content added || updated By
Promotion